ইস্তিগফার
ইস্তিগফার শব্দটির ভিতরে ঢেকে দেয়ার অর্থ পাওয়া যায়। মানুষ গুনাহ করার পর যখন ইস্তিগফার করে তখন ইস্তিগফার কৃত কর্মের ঢাকনা হিসেবে কাজ করে। পরিভাষায় ইস্তিগফার হল বান্দার আপন কর্মে উনুতপ্ত হয়ে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করাকে ইস্তিগফার বলে।
ইস্তিগফারের অর্থ;
ইস্তিগফার আরবী শব্দ যার অর্থ; ঢেকে দেয়া গোপন করা। ইস্তিগফার মানব জাতির অন্যতম সেরা একটি আমল। যা আদম আলাইহিস সালাতু আসসালাম থেকে মিরাস সূত্রে পেয়েছি। মানুষের কর্তব্য হল যখন কোন গুনাহ হয়ে যায় তাৎক্ষণিকভাবে আল্লাহর দরবারে ইস্তিগফার করে ক্ষমা প্রার্থনা করা।
ইস্তিগফার কখন করবো।
যখন অজ্ঞাতসারে কোনো গুনাহ হয়ে যায় তাৎক্ষণিকভাবে কর্তব্য হল তাওবা ইস্তিগফার করে আল্লাহের কাছে কান্নাকাটি করে ক্ষমা চেয়ে নেয়া। কারণ; গুনাহ সংঘটিত হওয়ার সাথে সাথে আমাদের সাথে থাকা ফেরেশতাগণ সেটা লিপিবদ্ধ করার জন্য সময় নিয়ে থাকেন যতক্ষণ না বান্দা ইস্তিগফার করে যদি বান্দা ইস্তিগফার না করেন তবে ফেরেশতাগণ বান্দার করা গুনাহকে লিখে ফেলেন। তাই উচিত কোনো গুনাহ হয়ে গেলে সাথে সাথে তাওবা ইস্তিগফার করা।
ইস্তিগফার এর কি কোন নির্দিষ্ট সময় আছে।
নামাজ রোজা ও হজ্জ ইত্যাদির মত ইস্তিগফার এর কোন নির্দিষ্ট সময় নেই। ইস্তিগফার যেকোন সময় করা যায়। বিশেষত যখন কোন গুনাহ হয়ে যায় তখন সাথে সাথে ইস্তিগফার করতে হয়। তাই যখন গুনাহ হয়ে যায় তাৎক্ষণিকভাবে আল্লাহর কাছে তওবা ইস্তিগফার করে ক্ষমা চাইতে হবে নচেৎ মৃত্যুর এসে যাওয়া নিয়ে কারো নিশ্চয়তা নেই।
তাওবা ইস্তিগফারের গুরুত্ব।
আল্লাহ তাআলা তার কালামে অসংখ্য স্থানে তাওবা ইস্তিগফারের কথা বলছেন। বিশেষত কোরআনের একটি সুরাকে তাওবা নামে নাম রেখেছেন; সূরা তাওবা। যাতে আমরা তাওবার গুরুত্ত অনুধাবন করতে পারি। সে জন্যে আল্লাহ তাআলা সূরাকে এ নামে নাম রেখেছেন। আল্লাহ তাআলা কিভাবে তাওবা ইস্তিগফার করতে হয় তা বিভিন্নভাবে কোরআনে শিক্ষা দিয়েছেন। পবিত্র কোরআনের বহু আয়াতে আল্লাহ ইস্তিগফারকারি কে ভালোবাসেন সেটা অসংখ্য স্থানে বর্ণনা করেছেন।
ফরয নামাযের পর ইস্তিগফার।
হাদিসে বলা আছে যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফরয নামাজের পর তিনবার পড়তেন; আস্তাগফিরুল্লহ, আস্তাগফিরুল্লাহ, আস্তাগফিরুল্লাহ। আমাদের কে তালিম দেওয়া হচ্ছে যে, তুমি নামাজ পড়ার পর ইস্তেগফার করো এই কথার উপর যে, হে আল্লাহ এই নামাজের যে হক ছিল তা আমি সঠিকভাবে আদায় করতে পারি নাই। হয়তো অনেক ভুল ত্রুটি থেকে গেছে। কত কমতি রয়ে গেছে। আর সেগুলোর উপর আমি ইস্তেগফার করতেছি। আর তিনবার ইস্তেগফার করার দ্বারা আল্লাহ তাআলা সেসব ভুল, ত্রুটি ও কমতি থাকার পরও আল্লাহ তায়ালা সেটাকে পরিপূর্ণভাবে ইনশাআল্লাহ আপনার আমলনামা লিখে দিবেন।
ইসতিগফার হচ্ছে; এক মহান নেয়ামত আল্লাহতালার পক্ষ থেকে ইস্তেগফারকে কোন সাধারণ জিনিস মনে করো না। এটা, প্রথমতঃ তো গুনাহকে মাফ করায়। দ্বিতীয়তঃ এবাদতের ভুল ত্রুটির ক্ষতিপূরণ করে।
আমরা আল্লাহর দরবারে যতটুকুই এবাদত করি সেটা শুধু নামমাত্র এবাদত। আল্লাহর কতটুকুই বা এবাদতের হক আদায় করতে পারবো এই দুর্বল বান্দা। আল্লাহ তাআলার কি মারেফত হাসিল করতে পারবে? সে কী বুঝবে আল্লাহকে? আল্লাহ তাআলার সামনে সেজদা করে কিভাবে হক আদায় করবে।
তার সে শক্তি নেই বিশ্ব জাহানের এবাদতের হক আদায় করার। এটা শুধু মাত্র এবাদত রুকু করে নিলাম সেজদা করে নিলাম আল্লাহর সামনে বিনয়াবনত হয়ে দাঁড়ালাম কিন্তু এগুলা শুধু নামমাত্রই এবাদত। কিন্তু যখন আল্লাহ তাআলার কাছে ইস্তেগফার করবো এবাদতে যেসব ত্রুটি রয়ে গেছে এর উপর তো, আল্লাহ তাআলা এই এবাদতকে সেভাবেই কবুল করবেন যেভাবে প্রকৃত ইবাদতকে কবুল করেন। ইস্তেগফার ভুলগুলোকে মুছে দেয়। কখনো কখনো শয়তান ফুসলিয়ে এবদতের পর ভিতরে গর্ব-বোধ তৈরি করে যে, তুমি অনেক কিছু করে ফেলেছ, নামাজ পড়ে ফেলেছো, হজ্জ আদায় করে ফেলেছ, যাকাত দিয়ে ফেলেছ, রাতভর নামাজে দাড়িয়ে ছিলা ইত্যাদি ইত্যাদি। শয়তান ভিতরে আত্মগর্ববোধ তৈরি করে। আর আত্মগর্ববোধ এবাদত কে নষ্ট করে দেয়। সুতরাং, সেটার চিকিৎসা হচ্ছে আলহামদুলিল্লাহ ও ইস্তেগফার। আমি কি আল্লাহর এবাদত করতে পারতাম। তো আল্লাহ আমাকে তার এবাদত করার যোগ্যতা দিয়েছেন তাওফিক দিয়েছেন এর জন্য শুকরিয়া আদায় করছি।
O Allah, if you had not helped us, we would not have been guided and would not have been able to give charity, pray, fast, and sacrifice.
তো শুকর এমন এক জিনিস যা আত্মগর্ভবোধ কেটে দেয়। যে, আমি অনেক বড় মানুষ হয়ে গেছি, বড় এবাদতকরি হয়ে গেছি।
এসব কিছু শয়তানের পক্ষ থেকে আসে যার মনে এসব আসবে তার চিকিৎসা হচ্ছে শুকর ও ইস্তিগফার। আমার কোনো যোগ্যতা ছিল না আমি কিভাবে এবাদত করতাম যদি আল্লাহ তাওফিক না দিতেন। আর যেই ভুল ত্রুটি হয়েছে সেটার চিকিৎসা হচ্ছে এস্তেগফার যায় মাধ্যেমে ভুল ত্রুটি আল্লাহ মাফ করে দেন।
.png)