Menstruation: মেয়েদের মাসিক নিয়ে কিছু কথা যা না জানলেই নয়

মেয়েরা সব দিক দিয়ে এগিয়ে গেলেও স্বাস্থ্য বিষয়ে তেমন সচেতন নয়। যদি কোন জরুরী দরকার না পড়ে তবে তারা ডাক্তারের কাছে যেতেই চায়না। ছোট কোন বিষয় নিয়ে বিশেষ করে বয়সন্ধিকালে । বয়সন্ধিকাল তাদের কাছে অতি লজ্জার বিষয়। গোপন করে রাখতে চায়। অথচ (Menstruation) মাসিক  আল্লাহ তায়ালা নির্ধারিত করে দিয়েছেন একজন নারীর জন্য  প্রাকৃতিক নিয়ম। এই স্বাভাবিক বিষয়টা নিয়ে সমাজে কত কু-প্রথা ছড়িয়ে আছে। যার ফলে মেয়েদের নানান সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। ফলে তাদেরকে এ সম্পর্কে কেউ কিছু বলেও না তারাও লজ্জার কারনে কিছু জানতেও পারেনা। তাই এসব সম্পর্কে ধারণা দিতেই আজকের এই লেখা

Menstruation: মেয়েদের মাসিক নিয়ে কিছু কথা যা না জানলেই নয়

ছবি: সংগ্রহীত 


মাসিক কি? মাসিক/Menstruation কেন হয়

হরমোনের প্রভাবে প্রত্যেক মাসে মাসে মেয়েদের জরায়ু চক্রাকারে যে পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে যায় জরায়ু মিশ্রিত রক্ত যোনিপথ দিয়ে বের হয়ে যায় আসে তাকে ঋতুস্রাব বা মাসিক/Menstruation বলে। একজন মেয়ের ঋতুস্রাব বা মাসিক যেমন স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী এবং গর্ভধারণের ক্ষমতাও একটু একটু করে তৈরি করতে থাকে। আরেকটু বুঝিয়ে বললে প্রতিমাসে মেয়েদের গর্ভাশয় বাইরের আবরণ কে শক্ত করে যাতে  সে গর্ভাবস্থায় তার বাচ্চাকে জায়গা দিতে পারে। কিন্তু পরে যখন কোন ভ্রূণ নিষিদ্ধ হয় না তখন এই শক্ত আবরণ টাকে ছিড়ে ফেলে এবং আবার নতুন করে আবরণ তৈরি করতে থাকে আর এই কার্য ২৮ দিনের মধ্যেই সম্পূর্ণ হয়ে থাকে। 

মেয়েদের ঋতুস্রাব বা মাসিক কত প্রকার

মেয়েদের মাসিক তিন প্রকার যথা;

👉 মেন্সট্রুয়াল ফেস।
👉 প্রলিফারেটিভ ফেস। 
👉 সেক্রেটরি ফেস। 

মেনস্ট্রুয়াল ফেস

এটি চার দিন স্থায়ী হয়। এ সময় যৌনি পথে রক্ত বের হয়। এই প্রক্রিয়াটি ঘটে ইন্সট্রোজেন এবং প্রজেস্টেরনের কারণে।

প্রলিফারেটিভ ফেস

এটি ৮ থেকে ১০ দিন স্থায়ী হতে পারে। শুধু ইন্সট্রোজেনের হরমোনের কারণে এটি হয়।

সেক্রেটরি ফেস

সবচেয়ে দীর্ঘ যা ১০ থেকে ১৪ দিন। প্রোজেস্টেরন বা লুটিয়াস ফেস ও একে বলা হয়। এ সময় জরায়ু সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিয়ে থাকে নিষিদ্ধ ডিম্বাণু বৃদ্ধির জন্য। এভাবেই পূর্ণবয়স্ক মেয়েদের ঋতুস্রাবের চক্র চলতে থাকে। 

মাসিক নিয়ে কুসংস্কার

সামাজিক কিছু কথার জন্য শারীরিক অস্থিরতার পাশাপাশি এসব কুসংস্কারের জন্য মেয়েরা প্রাচীনকাল থেকেই কাউকে period/পিরিয়ডের কথা বলতে বা তার থেকে জানতে লজ্জাবোধ করে। পিরিয়ড বা মাসিক হলে রুমের বাইরে যাওয়া যাবেনা, শরীরে পানি লাগানো যাবে না, চুল ধোয়া যাবেনা, বিছানায় শোয়া যাবেনা, এইসব আরো কত কি কিন্তু এসব কিছুই হলো কুসংস্কার। এ সময় মেয়েদের পর্যাপ্ত আলো বাতাসে প্রয়োজন পানি খাওয়া প্রয়োজন তাই এ সময় ঘরের কোণে বসে না থেকে পর্যাপ্ত আলো বাতাসে যেতে হবে। পিরিয়ড চলাকালীন মেয়েরা রান্না করে ঢুকবে না। আচার খাবে না এরকম কিছু ভ্রান্ত ধারণা ও ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে যা একেবারেই ভিত্তিহীন।

মাসিকের সময় প্যাড বা ন্যাপকিনের ব্যবহার

বাজারে এখন ন্যাপকিনের প্যাকেট পাওয়া যায়  ন্যাপকিনের প্যাকেট যেমনই হোক না কেন একটা ন্যাপকিন দীর্ঘক্ষণ ব্যবহার করা উচিত নয়  দুই তিন দিন খুব বেশি রক্তক্ষরণ হয় তাই দুই ঘণ্টা পরপরই ন্যাপকিন চেঞ্জ করা উচিত। কিন্তু তবু সর্বোচ্চ চার ঘণ্টা ব্যবহার করতে পারবে এর উপর ব্যবহার করা উচিত নয়।

কিন্তু চতুর্থ বা পঞ্চম দিনের রক্তের পরিমাণ অনেকটা কমে আসে তাই কেউ কেউ ন্যাপকিন দীর্ঘক্ষণ ব্যবহার করতে থাকে। যার ফলে রক্ত শুকিয়ে সেখানে ব্যাকটেরিয়ার তৈরি হয় এবং যার জন্য যোনিপথে ফোড়া চুলকানি ইনফেকশন ইত্যাদি নানান সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে। এ সকল বিষয় থেকে সচেতন থাকুন সাবধানে থাকুন। মাসিক ও ঋতুস্রাব চলাকালীন মেয়েদের পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা আবশ্যকীয়।

পিরিয়ডের সময় নিজেকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা রাখা খুবই জরুরী ন্যাপকিন পাল্টানোর সাথে সাথে নিজেকেও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। সাথে আপনার ন্যাপকিন তাও পাল্টে ফেলুন নয়তো এত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন হওয়ার কোন লাভই হলো না, সাথে আপনার ব্যবহৃত বেলটাও জীবাণুনাশক সাবান দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।

পিরিয়ড নিয়ে কিছু টিপস

১.নিজেকে হাসি খুশি রাখুন প্রাণবন্ত থাকা চেষ্টা করুন  😊

২. পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করুন 

৩. কোন ভারী কাজ করবেন না ✖️

৪. চুপচাপ বসে না থেকে হালকা ব্যায়াম করুন  

৫. এ সময় তলপেটে ব্যথা হওয়াটা স্বাভাবিক  

তাই তলপেটে ব্যথা হওয়ার সময় গরম পানি ওয়াটার ব্যাগে নিয়ে তলপেটে সেক দিতে পারেন এত করে ব্যথাটা অনেকটা কমে যাবে।

৬. শরীরের আয়রনের ঘাটতি দূর করতে খাবারের তালিকায় পর্যাপ্ত পরিমাণ শাক-সবজি ফলমূল রাখেন। 

প্রতি মাসে নিয়ম করে এই  চক্রটা ঘটবে এটাই প্রকৃতিগত নিয়ম। এটি একজন নারীর শরীর বৃত্তীয় অধিকার এবং সুস্থতার মূল অংশ। তাই এই ঋতুস্রাব বা মাসিক নিয়ে কোন লজ্জা, অজ্ঞতা, কুসংস্কার মনের মধ্যে পুষে রাখবেন না। তাই বয়সন্ধিকালের আগে ই বাড়ির মেয়ের পাশাপাশি ছেলেকেও সুস্পষ্ট ধারণা দিতে হবে এ বিষয়ে। এভাবেই সমাজ থেকে ঋতুস্রাব নিয়ে সমস্ত কু প্রথা আস্তে আস্তে দূর হয়ে যাবে। 

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url